বগুড়ায় সোনাতলা সৈয়দ আহম্মেদ কলেজ হাটে চলছে চাঁদা বাজি-ইউএনও সোনাতলা
জাহিনুর ইসলাম : উত্তরাঞ্চলের অন্যতম হাটগুলোর মধ্যে বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার সৈয়দ আহম্মদ কলেজ হাট। বিগত ৪২ বছর ধরে একটি পারিবারিক কমিটির পরিচালনায় চলছে হাটটি। কয়েক দফায় উপজেলা প্রশাসন থেকে এই বিশাল হাটটির ইজারা বিজ্ঞপ্তী প্রকাশ করলেও অজানা কারনে হাট ইজারা ভেস্তে যায়। অনেকে মনে করেন হাট কমিটি প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এতোদিন অবদি হাট চালিয়ে আসছে।
আর এর থেকে বিরাট অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এটা দেখে সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট মিনহাদুজ্জামান বিষয়টি আমলে নিয়ে এ হাটের বিষয়টি উপজেলা মাসিক সমন্ময় মিটিং এ আলোচনা করেন ,পরে তার অক্লান্ত চেষ্টায় হাটটির ইজারা দরপত্র আহ্বান করেছে উপজেলা প্রশাসন। হাটটি বসে রেল লাইনের উপর ও স্থানীয় একটি মাদ্রাসা মাঠে। বিশেষ করে রেল রাইন সংলগ্ন হওয়ায় বিগত দিনগুলোতে অনেকবারি ঘটেছে রেল দুঘর্টনাসহ নানা ঘটনা । করোনা কালিন এই সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সর্তকতা করলেও তার কোনো তোয়াক্কা না করেই নুন্যতম বিধি নিষেধ না মেনেই চলছে ইজারা ঘোষিত এ হাটের কার্যক্রম।
হাটটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন আইনী জটিলতা চললেও সর্বশেষ গত ১৪ই জুন হাটটির ইজারা বিজ্ঞপ্তি বন্ধের ষ্টে-অর্ডারটি বাতিল করে একটি অর্ডার দেন হাইকোর্ট বিভাগ ।
এ বিষয়ে সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান ,উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাড. মিনহাদুজ্জামান লিটনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, অবৈধ হাটটি সরকারিভাবে ইজারার আওতায় আনার জন্য অনেক চেষ্টার পরে হাইকোর্ট থেকে ইজারা দরপত্র আহ্বান করার জন্য সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন। আবার বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে অবৈধ হাটটির পরিচালনাকারী ১২ জন সদস্য হাটটির দরপত্র বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিটের শুনানী শেষে বিচারপতি এম এনায়েত রহিম গত ১২ জুলাই সৈয়দ আহম্মদ কলেজ হাটের ইজারা বিজ্ঞপ্তি এক মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেন। আবার এই আদেশ স্থগিত চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব সুপ্রিম কোর্টে সিভিল বিবিধ পিটিশন দায়ের করেন। ওই পিটিশন শুনানী শেষে উক্ত হাটের ইজারা বিজ্ঞপ্তির স্থগিতাদেশ ৪ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করার আদেশ দেন মাননীয় বিচারপতি ওবাইদুল হাসান।
ওই অর্ডারটির একটি কপি সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে প্রেরণ করেন। এছাড়া আমি ওই অর্ডারের প্রেক্ষিতে ইউএনও মহোদয়কে একটি চিঠি দেই যেখানে বলা আছে সৈয়দ আহম্মদ কলেজ হাটে ইজারা কার্যক্রম যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে সূসম্পন্ন করতে আর কোন আইনী জটিলতা নাই। তাই ইজারা কার্যক্রম সুসম্পন্ন করে ইজারাকারীর নিকট হাটটি বন্দোবস্ত দেয়ার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত প্রচলিত আইন ও হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী খাস আদায়ের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। এর পরেও আজ ১৫ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে হাটটি চলছে।
বাংলাদেশের আইনকে শ্রদ্ধা করে বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় এবং সহযোগীতা করার জন্য আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু এমন কর্মকান্ডে উপজেলা প্রশাসনের কোন সহযোগীতা পাচ্ছিনা। আমি আশা করবো সংশ্লিষ্ট কৃর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিয়ে সরকারী কোষাগারে অর্থ জমা দেয়ার পথটিকে সুগম করবে। এ বিষয়ে সোনাতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন সৈয়দ আহম্মদ কলেজ হাটটির নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। এমন কথা বললেও প্রশাসন থেকে হাট চলাকালীন সময়ে কোন আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পূর্বে হাট পরিচালনা কারী প্রায় ২শতাধিক কর্মী দিয়ে ওই হাটের নাম মাত্র রশিদ প্রতিটি গরু বিক্রির ক্ষেত্রে ৭শত ,আর ছাগল বিক্রির ক্ষেত্রে ৩শত টাকা নিচ্ছেন।
হাটে আসা কয়েক জনকে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান,এর আগে প্রতিটি গরু বিক্রির ক্ষেত্রে ৫শত টাকা নিলেও আজ তা বাড়িয়ে ৭ শত টাকা করা হয়েছে। এতে প্রাই দুই কিলোমিটার জুড়ে এ হাটে আসা গরু বিক্রেতা কমপক্ষে ১০-১৫ হাজার গরু ও ৩-৪ হাজার ছাগল,ভেড়াসহ অন্যন্য পশু উঠেছে,কুরবানী উপলক্ষে ক্রেতার সংখ্যাটাও অনেক বেশি। এ হাটে দেশের দুর-দুরান্ত থেকেও আসে অনেক পাইকর ও ক্রেতারা।
বিষয়টি নিয়ে হাট কমিটির সভাপতি মেজবাহুল হক জুলুর সাথে কথা বললে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।এ হাটটি সরকারী ইজারা দেওয়ার বিষয়টি সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি এরিয়ে যান। সাপ-লুডুর এমন খেলায় স্থানীয় সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষ মনে করছে তবে কি ? শরিষার মধ্যে ভুত লুকিয়ে! তা নাহলে এমন ঘটনায় প্রশাসন একেবারেই নিরব কেনো। যদি হাট ইজারা দিয়ে তার বাস্তবায়ন না হয় তাহলে এমন করার মানে হয়না।