“স্বপ্ন ভঙ্গ” – সাজেদুর আবেদিন শান্ত
এইতো কিছু দিন আগেই জেএসসি পরীক্ষাতে গোল্ডেন এ প্লাস পেলো জারিফ।এই অজপাড়াগাঁয়ে এমন রেজাল্ট আগে কেও করেনি, তাই চারিদিকে তার রেজাল্ট এর কথা ছড়িয়ে গেছে। এর মধ্যেই দুই বছর পেড়িয়ে গেলো,বুঝাই গেলো না। এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দিলো। পরীক্ষা অবশ্য খুব ভালো গেছে জারিফের। জারিফ এর বাবা ছোটবেলায় মারা যায়। তারপর তার মা অনেক কষ্ট করে অন্যের বাড়িতে কাজ করে জারিফ কে লেখাপড়া করায়। জারিফের সে কথা অজানা নয়। তাই সে দুষ্টামি করলেও পড়ালেখা ভালো ভাবে করে। জারিফের স্বপ্ন একটাই সে বড় হয়ে বড় কিছু হতে চায়। কি হতে হবে তা সে জানে না! শুধু জানে তাকে বড় কিছু হতে হবে। মাকে সুখে শান্তিতে রাখতে হবে। মায়ের কষ্টের দাম কিছু হলেও দিতে হবে। আজ জারিফের রেজাল্ট দিবে। সে সকালে উঠেই মাকে বললো দেখো মা আজ তোমার ছেলে ভালো কিছু করবে। মা মুচকি হেসে বললো জানি ‘আমার ছেলে ভালো কিছু করবেই’। তার মা ও আস্বস্ত হলো কারণ তার মা জানে তার ছেলে ভালো রেজাল্ট করবেই। সকালের খাবার খেতে গিয়ে জারিফ দেখলো তার খাবার গলা দিয়ে নামছে না। অস্থিরতায় নাকি ভয়ে? তা জানা গেলো না। জারিফ ঠিক মতো খেতে পারলো না। সে খাবার ছেড়ে উঠে বাহিরে গেলো বন্ধুদের সাথে খেলতে। খেলা শেষে দুপুরে ফিরে এসে গোসল দিয়ে খাবার খায়। কিন্তু সকালের মতই সে খেতে পারলো না।সময় যত এগুতে লাগলো তার অস্থিরতা তত বাড়তে লাগলো। তার রেজাল্ট দিবে দুপুর দুই টায়। জারিফ নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুলে গেলো। ঠিক আধা ঘন্টা পর রেজাল্ট প্রকাশ করা হলো। স্কুলের নোটিশ বোর্ডে রেজাল্ট সিট টাঙানো হলো। রেজাল্ট দেখেই তার মাথায় যেনো বাজ ভেঙে পড়লো। যেনো পুরো পৃথিবী স্থবির হয়ে গেলো মুহুর্তের মধ্যেই। জারিফের নিরবতার কান্না যেনো আর কোনো বাধা মানে না। জারিফ ফেল করেছে। কেনো এমন হলো সে জানে না। বারবার মনে হতে লাগলো এমনতো হওয়ার কথা নয়। এই রেজাল্ট এর কথা মাকেই বা বলবে কি করে?
যে ছেলে আজ সকালে তার মাকে আস্বস্ত করে এসেছে তাকে এই রেজাল্টের কথা বলবেই বা কি করে? সে ভাবতে লাগলো তবে কি সে ব্যার্থ, তবে কি সে নষ্টদের অধিকারে গেছে?তার মায়ের স্বপ্ন কী সে ছেলে হয়ে পুরুন করতে পারবে না? এসব ভাবতে ভাবতে তার মায়ের হাসি মুখ তার কল্পনায় চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সে মাথা নিচু করে নিরবে বেরিয়ে এলো স্কুল থেকে। তার মনে হতে লাগলো তার বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই। যে ছেলে মায়ের স্বপ্ন পুরন করতে পারে না তার মরা উচিত। সে হাটতে থাকলো অজানা গন্তব্যে। জারিফ আর বাড়ি ফেরে না। এদিকে জারিফের মা জারিফ কে খুঁজছে, কিন্তু কোথাও জারিফ কে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে সন্ধ্যা নেমে এলো।রাত হলো জারিফ কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মা হাতে একটি মাটির কুপি নিয়ে খুজতে লাগলো।জারিফের মা হন্নি হয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজছে গ্রামের এপাড়া থেকে ওই পাড়া।কিন্তু জারিফের কোনো হদিস মিলছে না। জারিফের মা ভাবতে থাকে স্বামীকে সে হারিয়েছে অনেক আগেই তবে কি এবার সন্তানকেও? ভাবতে ভাবতে রাত ভোর হয়ে গেলো। উষা লগ্নে আলো ফুটলো। জারিফের মা দেখতে পেলো দূরে ব্রিজের পাশে বট গাছের ডালে দড়িতে কে যেনো ঝুলছে। দেখে মনে হলো তার হৃদয়ের টুকরো জারিফের মত….