করোনার চিকিৎসা এবং ইসলামী স্বাস্থ্য কথা
বর্তমান সময়ের নতুন এক আতংকের নাম “করোনা”। বিশ্বব্যাপী এই মহামারীর এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিশেধক আবিষ্কৃত হয় নি। তাই মানুষের আতংক যেমন কাটছে না, অন্যদিকে হন্যে হয়ে খুঁজছে এর একটি সমাধান। এখন এ ক্ষেত্রে ইসলামের ব্যাখ্যা কী?
হ্যা নিশ্চয় ইসলামের কিছু ব্যাখ্যা অবশ্যই আছে এবং তা সংক্ষেপে আলোচনাও করা হবে ইনশাল্লাহ। তবে তার আগে এক্ষেত্রে আমাদের বিশ্বাসগত ধারনা পরিষ্কার করা প্রয়োজন। সে বিশ্বাস গুলো কী? নিচে উল্লেখ করছি।
এক. সকল রোগ/শোক, দুঃখ/দুর্দশা আল্লাহর সৃষ্টি।
দুই. কোনো কিছুই তিনি এমনি এমনি সৃষ্টি করেন না। সুতরাং এর পিছনেও কোনো কারন আছে।
তিন. নতুন নতুন রোগ কিংবা মহামারী দেন আযাব/গযব হিসাবে। বান্দার সতর্কতার জন্য।
চার. সকল রোগের প্রতিশেধকও তিনি সৃষ্টি করেন। এবং সকল রোগ তিনিই নিরাময় করেন।
এই চারটি বিশ্বাসগত মৌলিক ধারানা পরিষ্কার হবার পর, এবার আলোচনা করতে হবে এই রোগের কিংবা মহামারীর কারন কী? হ্যা সে সম্পর্কে গত দুইটি পর্বে কুরআন এবং সুন্নাহ দ্বারা একটি জিনিসকে বিশেষ ভাবে সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছি। আর তা হলো, জিনাহ/ ব্যাভিচার বা অশ্লীলতা। তাহলে এবার আমরা বলব, এই মহামারী থেকে বাচার প্রথম ঔষধ হবে, এখান থেকে আমাদের তওবা করে ক্ষমা চাওয়া। এবং অশ্লীলতা মুক্ত একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে কাজ করা। দ্বিতীয়ত, আল্লাহ যেহুতু সকল রোগের প্রতিশেধকও দিয়ে থাকেন, সুতরাং এ ক্ষেত্রে যে প্রতিশেধক গুলো নিতে পারি।
# পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাঃ আজকে চিকিৎসা বিজ্ঞান বারবার হাত ধোয়ার কথা বলছে। পরিস্কার- পরিচ্ছন্নতার কথা বলছে। ইসলামও ঠিক এমনটা বলে আসছে সব সময়। পরিস্কার- পরিচ্ছন্নতা ইসলামে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এটিকে “ইমানের অর্ধেক” বলা হয়েছে। আর তার বাস্তবতা হলো বারবার অযু/ গোছলের বিধান।
# মাস্কঃ আজ যে মাস্ক ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে, ইসলাম তা বলেছে বহু আগে। যেমন রাসুল সঃ সামান্য হাচি দিতেও হাত কিংবা রুমাল দিয়ে ঢাকার জন্য তাগাদা দিয়েছেন।
# জনসমাগম এড়িয়ে চলা কিংবা স্থান ত্যাগ না করাঃ রাসুল সঃ এর নির্দেশ মহামারী আক্রান্ত এলাকায় কেহ প্রবেশ করবে না এবং আক্রন্ত এলাকা থেকে কেহ অন্যত্র যাবে না। [সহিহ বোখারিঃ ৫৭৩০]
# হোমকোয়ারেনটাইনঃ মুসনাদে আহম্মদের একটি বর্ননা অনুযায়ী দেখা যায়, হযরত ওমরে ফারুক রাঃ এর সময় একবার এক মহামারী দেখা যায়। আর তখন তিনি নির্দেশ দেন যে, তোমরা কিছুদিন পাহারে অবস্থান করো। অর্থাৎ কোয়ারেনটাইনে যাও। তার মানে বোঝা গেল এটিও বহু আগে থেকেই ইসলামের নির্দেশনা।
# মধু ও কালো জিরা কুরান ও সুন্নাহ দ্বারা এটি প্রমানিত যে এই দুইটি জিনিস মৃত্যু ব্যতিত সকল রোগের ঔষধ। যা আধুনিক বিজ্ঞানও প্রমান করেছে যে এই দুইটি জিনিসে পছুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বিদ্যমান। তাই এসব পতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা দরকার।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন : তাতে মানুষের জন্য রোগের প্রতিকার রয়েছে। (সুরা আন-নাহল, আয়াত : ৬৯)। আর যেকোনো রোগীকে মধু পান করানো হলে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। (আল-বাইহাকি, আস-সুনানুল সুগরা, খ. ৮, পৃ. ৩৪৫, হাদিস : ৩৯৫৮)।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ কালো জিরা ‘সাম’ ছাড়া যাবতীয় রোগের ঔষধ।
ইবনু শিহাব বলেছেনঃ আর ‘সাম’ অর্থ হল মৃত্যু এবং কালো জিরাকে ‘শুনীয’ও বলা হয়।[সহিহ বোখারিঃ ৫৬৮৮]
# খেজুরঃ খুজের পুষ্টিগুন ত নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এটি মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুনে বৃদ্ধি করে। তাই এটিও নিয়মিত খাওয়া দরকার। রাসুল সঃ বলেন যে ব্যক্তি সকালে ৭টি আজওয়া খেজুর খাবে তাকে কোনো রকমের বিষও কাজ করতে পারবে না। [সহিহ বোখারিঃ ৫৪৪৫]
# দোয়াঃ এরকম মহামারী কিংবা নতুন-নতুন রোগবালাই থেকে বাচতে রাসুল সঃ কিছু দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। আমাদের উচিৎ তা সকাল-সন্ধা পাঠ করা। যেমনঃ-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে-بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُউচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিসসামায়ি, ওয়া হুয়াসসাম উল আলিম।’সকাল হওয়া পর্যন্ত ওই ব্যক্তির উপর আকস্মিক কোনো বিপদ আসবে না। আর যে ব্যক্তি সকালে তিনবার এ দোয়া পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো বিপদ আসবে না।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)অর্থ : ‘আল্লাহর নামে, যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।
>> اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِউচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি) অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দুরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।’
>> اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِউচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’ (তিরমিজি)
[লেখকঃ গোলাম রব্বাণী রোমান। চেয়ারম্যান, আন-নূর সাইন্টিফিক মাদরাসা, সোনাতলা, বগুড়া।]